ঈদের দিন রোজা রাখা নিয়ে ইসলাম কি বলে: ইসলামে রোজা পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর নির্দেশনায় এবং রাসূলের (স.) সুন্নত অনুসারে পালন করা হয়। তবে এমন কিছু বিশেষ দিন রয়েছে যখন রোজা রাখা নিষিদ্ধ, এবং ঈদের দিনগুলো তেমনই একটি সময়। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন রোজা রাখা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ বা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আজ আমরা জানবো, ঈদের দিন রোজা রাখা কেন হারাম, ইসলামের দৃষ্টিতে এই নিষেধাজ্ঞার কারণ কী, এবং এ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে।
ঈদের দিন রোজা রাখা নিয়ে ইসলাম কি বলে:
কেন ঈদের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ?
ঈদের দিন হলো আনন্দ, খুশি এবং আল্লাহর দেওয়া বিশেষ উপহারকে উপভোগ করার দিন। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা শুধু ইবাদতের ওপর জোর দেয় না, বরং মানুষের জীবনে খুশি, শান্তি এবং সম্পর্কের মধুরতাও বজায় রাখে। তাই ঈদের দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে যাতে মানুষ আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত এবং এই আনন্দঘন মুহূর্তকে উপভোগ করতে পারে।
- আনন্দের দিন হিসেবে ঈদ
ঈদের দিনকে ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আনন্দের দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই দিনে রোজা রাখলে সেই আনন্দের মূল উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে না এবং মানুষের দেহ ও মন শিথিলতার সুযোগ পাবে না। - রাসূল (স.)-এর নির্দেশনা
হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, “ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন রোজা রাখা হারাম।” (সহিহ মুসলিম)। এই নির্দেশনাটি স্পষ্টভাবে ঈদের দিনে রোজা রাখার বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থানকে নির্দেশ করে।
আরো পড়তে পারেন
ঈদের দিনে রোজা না রাখার পেছনের হিকমত | ঈদের দিন রোজা রাখা
ইসলামে ঈদের দিনগুলো হলো আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও রহমত প্রকাশের দিন। ঈদুল ফিতরের দিন রমজানের একমাস দীর্ঘ রোজার পর মানুষের জন্য একটি পুরস্কার স্বরূপ এবং ঈদুল আজহার দিন কোরবানি বা ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দিন। এই দিনগুলোতে আনন্দ এবং খুশির অংশ হিসেবে খাওয়া-দাওয়া এবং আনন্দ উদযাপনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
- স্বাস্থ্য ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য
রমজানের এক মাসের রোজার পর ঈদের দিনে খাবার গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুত করে। ইসলাম মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্নবান, তাই এই দিনে রোজা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। - আনন্দ ও সামাজিক সম্প্রীতি
ঈদের দিনকে আনন্দের দিন হিসেবে মান্য করা হয়েছে, যা পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার একটি উপলক্ষ। রোজা রাখলে সেই আনন্দের পরিবেশে বিঘ্ন ঘটে এবং সামাজিক মিলন ও খুশির অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন রোজা না রাখার দলিল

হাদিস ও ইসলামী শরিয়তে ঈদের দিনে রোজা না রাখার ব্যাপারে একাধিক দলিল রয়েছে। ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম হওয়ার কারণে মুসলিমদের জন্য এটি পালন না করার নির্দেশ রয়েছে।
- হাদিসের বর্ণনা
সহিহ মুসলিমে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, “রাসূল (স.) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখা থেকে নিষেধ করেছেন।” এই হাদিসটি ইসলামে ঈদের দিনে রোজা রাখার নিষেধাজ্ঞার একটি শক্তিশালী দলিল। - ফিকহের নির্দেশনা
ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী, ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম হিসেবে বিবেচিত। ইসলামের চারটি প্রধান মাজহাবও এই বিষয়ে একমত, কারণ ঈদের দিন রোজা রাখার মাধ্যমে ইসলামের আনন্দ উদযাপন ব্যাহত হতে পারে।
ঈদের দিন ইসলামে করণীয় আমল

যেহেতু ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম, তাই এই দিনে বিশেষ কিছু আমল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যা ঈদ উদযাপনকে আরও অর্থবহ করে তোলে। এই আমলগুলো ঈদের দিনের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য এবং ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী পালন করা উচিত।
১. ঈদুল ফিতরের দিনে সাদকাতুল ফিতর আদায় করা
ঈদুল ফিতরের দিন সাদকাতুল ফিতর প্রদান করা সুন্নত এবং এটি রমজানের রোজা পালনের পর একটি পূর্ণাঙ্গতা প্রদান করে। এটি দরিদ্রদের জন্য আনন্দের কারণ হয় এবং তাদের ঈদের আনন্দে শরিক হতে সহায়ক হয়।
- সাদকাতুল ফিতরের গুরুত্ব
সাদকাতুল ফিতর ঈদের দিন সকালে নামাজের আগে প্রদান করা উত্তম, কারণ এটি রমজানের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। হাদিসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে সাদকাতুল ফিতর প্রদান করবে, তার রোজা পরিশুদ্ধ হবে।”
২. ঈদের নামাজ আদায় করা
ঈদের দিনে ঈদগাহ বা মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নত। এটি মুসলিমদের সামাজিক মিলন এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
- ঈদের নামাজের তাৎপর্য
ঈদের নামাজের মাধ্যমে মুসলিমরা একসঙ্গে জড়ো হয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাঁর দরবারে বিশেষ মোনাজাত করেন। এটি ইসলামি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা
ঈদের দিনে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। এটি একে অপরের কাছে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ তৈরি করে এবং আনন্দের অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তোলে।
- সুগন্ধি ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব
হাদিসে বর্ণিত আছে যে, “ঈদের দিনে সুগন্ধি ব্যবহার করা রাসূল (স.)-এর সুন্নত।” এই আমলটি মুসলিমদের মধ্যে ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা জাগায়।
৪. পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো ও খাবার ভাগাভাগি করা
ঈদের দিনটি পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা এবং দান-সদকার মাধ্যমে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের একটি বিশেষ শিক্ষা।
উপসংহার | ঈদের দিন রোজা রাখা কি

ঈদের দিন রোজা রাখা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনগুলোকে খুশি ও আনন্দের দিন হিসেবে পালনের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহর এই বিশেষ নিয়ামতের দিনগুলোতে রোজা রেখে ইবাদতে অতি বাড়াবাড়ি না করে বরং তাঁর দেওয়া নিয়ামত ভোগ করাই ইসলামের নির্দেশ। ঈদের দিনগুলিতে মুসলিমদের উচিত সাদকাতুল ফিতর প্রদান করা, ঈদের নামাজ আদায় করা এবং পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আল্লাহ আমাদের সবার ঈদ আনন্দময় ও শান্তিময় করুন এবং তাঁর আদেশ মেনে চলার তৌফিক দান করুন।