যে ১০ ধরনের মানুষের ওপর রোজা ফরজ নয়: ইসলামে রোজা পালন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের ওপর ফরজ বা বাধ্যতামূলক। তবে কিছু বিশেষ শর্ত এবং অবস্থায় কিছু ব্যক্তির জন্য রোজা পালন করা ফরজ নয়। ইসলামের শরিয়ত অনুসারে, শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আল্লাহ রোজার বিধান থেকে কয়েকটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আজ আমরা জানবো সেই ১০ ধরনের মানুষের কথা, যাদের ওপর রোজা ফরজ নয় এবং এর পেছনের ইসলামিক দৃষ্টিকোণ।
যে ১০ ধরনের মানুষের ওপর রোজা ফরজ নয়
১. শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক নয় এমনরা | কাদের জন্য রোজা ফরজ নয়
ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী, রোজা পালন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের ওপর ফরজ। তাই শিশু বা বালেগ নয় এমন ছেলেমেয়েদের ওপর রোজা পালন ফরজ নয়।
- শিশুদের রোজার দায়িত্ব কেন নেই?
রোজা পালনের জন্য শারীরিক সক্ষমতা এবং মানসিক পরিপক্বতা প্রয়োজন। ইসলাম শিশুদের এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে, তবে তাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য রোজা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন অভিভাবকরা।
২. অসুস্থ মানুষ | যাদের উপর রোজা ফরজ নয়
যে সব মানুষ দীর্ঘমেয়াদি বা গুরুতর অসুস্থতায় আক্রান্ত, তাদের ওপর রোজা পালন ফরজ নয়। শরীরের সুস্থতা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখা শরিয়তে বাধ্যতামূলক নয়।
- অসুস্থতার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “যে ব্যক্তি অসুস্থ অথবা ভ্রমণে থাকে, সে অন্য সময়ে এই রোজাগুলো পূর্ণ করবে।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৫)। অসুস্থরা সুস্থ হয়ে পরবর্তীতে কাজা রোজা রাখতে পারবেন।
৩. বৃদ্ধ এবং অক্ষম ব্যক্তি
যারা বয়সের কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন এবং রোজা রাখার ক্ষমতা নেই, তাদের ওপর রোজা ফরজ নয়। বয়সের কারণে শারীরিক দুর্বলতা থাকলে রোজার বিকল্প হিসেবে তারা ফিদিয়া দিতে পারেন।
- বৃদ্ধদের জন্য ফিদিয়া আদায়
ইসলামে বিধান রয়েছে যে, যারা শারীরিকভাবে দুর্বল এবং ভবিষ্যতেও রোজা রাখতে অক্ষম, তারা প্রতিদিনের জন্য এক মিসকিনকে খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে ফিদিয়া আদায় করতে পারবেন।
৪. মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি
যারা মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছেন, তাদের ওপর রোজা ফরজ নয়। ইসলামে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
- মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে রোজা না রাখার কারণ
রোজার জন্য মানসিক সুস্থতা অপরিহার্য। মানসিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য নন, এবং ইসলাম তাদের জন্য এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
৫. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের ওপর রোজা রাখা ফরজ নয়, যদি তা তাদের স্বাস্থ্য বা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হয়। ইসলামে নারীদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়েছে।
- গর্ভাবস্থায় রোজার অব্যাহতি
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের স্বাস্থ্য ও সন্তানের সুস্থতার জন্য তারা রোজা থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন। পরে কাজা রোজা রাখতে পারেন বা ফিদিয়া প্রদান করতে পারেন।
৬. ভ্রমণকারী ব্যক্তি

যারা ভ্রমণে রয়েছেন, তাদের ওপর রোজা পালন বাধ্যতামূলক নয়। তবে ইচ্ছা করলে ভ্রমণকারী ব্যক্তি রোজা রাখতে পারেন, এবং তা আদায় হিসেবে গণ্য হবে।
- ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “যদি তোমরা ভ্রমণে থাকো, তবে অন্য সময়ে এই রোজাগুলো পূর্ণ করো।” (সূরা আল-বাকারা)। ভ্রমণকারী ব্যক্তি চাইলে পরবর্তীতে কাজা রোজা রাখতে পারেন।
৭. হায়েজ বা মাসিক চলাকালীন নারীরা
ইসলামের বিধান অনুসারে, নারীদের মাসিক চলাকালীন সময়ে রোজা রাখা ফরজ নয়। এই অবস্থায় রোজা না রাখাই শরিয়তে সঠিক বিধান।
- মাসিকের ক্ষেত্রে রোজার বিধান
হায়েজ বা মাসিকের সময়ে রোজা না রাখার জন্য নারীদের পরবর্তীতে কাজা রোজা রাখতে হবে। ইসলামে নারীদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তাই তাদের এই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
৮. প্রসব পরবর্তী সময়ে নারীরা
প্রসবের পর নারীদের নিফাস (শুদ্ধি) চলাকালীন সময়ে রোজা রাখা ফরজ নয়। এই অবস্থায় নারীরা রোজা থেকে অব্যাহতি পাবেন এবং পরে কাজা রোজা রাখতে পারবেন।
- নিফাস অবস্থায় রোজা না রাখার নির্দেশনা
প্রসবের পর শুদ্ধি শেষ হওয়ার আগে নারীরা রোজা পালন করতে পারবেন না। এটি ইসলামিক বিধান এবং তারা শুদ্ধি শেষে কাজা রোজা রাখতে পারেন।
৯. যুদ্ধরত সৈনিকরা

যারা যুদ্ধে বা কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছেন, তাদের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। যুদ্ধরত অবস্থায় শারীরিক ও মানসিক শক্তির প্রয়োজন বেশি থাকে।
- যুদ্ধের সময় রোজার বিধান
ইসলামে যুদ্ধরত অবস্থায় রোজা না রেখে পরবর্তীতে কাজা রোজা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এটি শরিয়তে অনুমোদিত এবং এই অবস্থায় রোজা না রাখলে পাপ হবে না।
১০. অজ্ঞান বা অচেতন ব্যক্তি
যারা শারীরিক বা মানসিক কারণে অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছেন, তাদের ওপর রোজা ফরজ নয়। রোজার জন্য সচেতন ও সুস্থ থাকা জরুরি।
- অচেতন অবস্থায় রোজা রাখা না লাগার কারণ
ইসলামে ইবাদত পালনের জন্য শারীরিক ও মানসিক সচেতনতা প্রয়োজন। অচেতন ব্যক্তিদের রোজার বিধান প্রযোজ্য নয় এবং তাদের জন্য দায়মুক্তি রয়েছে।
উপসংহার | কাদের জন্য রোজা ফরজ নয়

ইসলাম একটি সহজ ও করুণাময় ধর্ম, যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। বিভিন্ন কারণ ও অবস্থায় নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির জন্য রোজা ফরজ নয়, এবং তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী, এসব ব্যক্তি পরে কাজা রোজা রাখতে পারেন অথবা ফিদিয়া প্রদান করতে পারেন। ইসলামের এই বিধানগুলো মানুষের জন্য সহনশীল এবং জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিতে ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের সুযোগ তৈরি করে। আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে ইসলামের বিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুন এবং আমাদের রোজা কবুল করুন।