রোজা ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি এবং এটি মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে, কিছু বিশেষ কাজ ও অবস্থার কারণে রোজা ভঙ্গ হতে পারে বা মাকরুহ (অপছন্দনীয়) হিসেবে গণ্য হতে পারে। রোজা ভঙ্গকারী কাজগুলো থেকে সতর্ক থাকা প্রত্যেক রোজাদারের জন্য অপরিহার্য, যাতে রোজা সম্পূর্ণ ও সঠিকভাবে পালন করা যায়। আজ আমরা জানবো সেই ২৯টি কারণ সম্পর্কে, যা রোজা ভঙ্গ বা মাকরুহ করতে পারে এবং এর পেছনের ইসলামিক দৃষ্টিকোণ।
রোজা ভঙ্গকারী কারণসমূহ
নিম্নে এমন কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো, যা রোজা সম্পূর্ণরূপে ভঙ্গ করতে পারে এবং রোজাদারকে নতুন করে সেই রোজার কাজা পালন করতে হবে।
১. ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা
রোজার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হবে। এটি রোজার প্রধান নিয়মের বিরুদ্ধে।
২. ধূমপান করা
ধূমপান করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, কারণ এটি এক ধরনের সেবন, যা শরীরে প্রবেশ করে।
৩. বমি হলে
ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোজা ভঙ্গ হয়, তবে অপ্রত্যাশিতভাবে বমি হলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
৪. ঔষধ খাওয়া
বিনা প্রয়োজনে ঔষধ গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
৫. ইনজেকশন গ্রহণ
যে ইনজেকশন খাবারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে, তা গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হবে।
৬. মাসিক বা নিফাস
নারীদের মাসিক বা নিফাস (প্রসব পরবর্তী সময়) চলাকালীন রোজা রাখা নিষিদ্ধ, এবং এসময়ে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
৭. ইচ্ছাকৃতভাবে সেবন
কোনো ধরনের সেবন করলে, যেমন তামাক, তা রোজা ভঙ্গ করে।
আরো পড়তে পারেন
রোজা মাকরুহকারী কারণসমূহ

নিম্নের কাজগুলো রোজা ভঙ্গ না করলেও মাকরুহ হিসেবে গণ্য হয় এবং রোজার পূর্ণ সওয়াব থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
৮. অতিরিক্ত গার্গল করা
অতিরিক্ত গার্গল বা নাকে পানি দেওয়া মাকরুহ, কারণ এর মাধ্যমে পানি গলা বা নাকে প্রবেশ করতে পারে।
৯. দাঁত ব্রাশ করা
রোজার সময় সুগন্ধিযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলে তা মাকরুহ হতে পারে।
১০. ইচ্ছাকৃতভাবে রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ
রাগ বা ক্ষোভের মাধ্যমে রোজা মাকরুহ হয়ে যেতে পারে, কারণ এটি আত্মশুদ্ধির বিপরীত।
১১. অহেতুক কথা বলা
বিনা প্রয়োজনে অতিরিক্ত কথা বললে রোজার সওয়াবে ক্ষতি হয়।
১২. তর্কবিতর্ক করা
রোজার সময় তর্ক করা মাকরুহ, কারণ এটি রোজার আধ্যাত্মিকতায় ব্যাঘাত ঘটায়।
১৩. মিথ্যা বলা
মিথ্যা বলা রোজার সওয়াব থেকে বঞ্চিত করতে পারে।
১৪. খারাপ ভাষা ব্যবহার করা
খারাপ ভাষা বা গালাগালি রোজার সওয়াব কমিয়ে দেয় এবং এটি মাকরুহ।
১৫. গিবত বা পরনিন্দা করা
রোজার সময় পরনিন্দা করা মাকরুহ এবং এটি রোজার ফজিলত নষ্ট করে।
১৬. কু-চিন্তা করা
রোজার সময় খারাপ চিন্তা করা মাকরুহ।
১৭. অশ্লীলতা দেখা
রোজার সময় অশ্লীল কিছু দেখা বা শোনা রোজাকে মাকরুহ করে দেয়।
১৮. অহেতুক ঘুমানো
পুরো দিন ঘুমিয়ে কাটানো মাকরুহ, কারণ এটি ইবাদতের সময় নষ্ট করে।
১৯. খাবারের স্বাদ চেক করা
অপ্রয়োজনীয়ভাবে খাবারের স্বাদ নেওয়া মাকরুহ।
২০. ইচ্ছাকৃতভাবে নখ বা চুল খাওয়া
চুল বা নখ মুখে নিয়ে যাওয়া মাকরুহ।
২১. তেল বা প্রসাধনী ব্যবহার
রোজার সময় অতিরিক্ত সুগন্ধি বা প্রসাধনী ব্যবহার মাকরুহ।
২২. স্বামী-স্ত্রীর অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা
রোজার সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ঘনিষ্ঠতা মাকরুহ হতে পারে।
২৩. জিহ্বা বা ঠোঁট কাটাছেঁড়া
ইচ্ছাকৃতভাবে ঠোঁট বা জিহ্বা কাটলে রোজার ফজিলত নষ্ট হয়।
২৪. শারীরিক অবসর নেওয়া
শারীরিক অনুশীলনের ফলে শরীর দুর্বল হলে রোজা মাকরুহ হতে পারে।
২৫. বিনা প্রয়োজনে তেল বা মলম ব্যবহার
চামড়ায় সরাসরি কোনো উপকরণ প্রয়োগ করলে তা মাকরুহ হতে পারে।
২৬. কাজের সময় গালাগালি করা
কাজের ফাঁকে রাগ প্রকাশ বা গালাগালি মাকরুহ।
২৭. ঈমানের দুর্বলতা
রোজার সওয়াব পাওয়ার জন্য ঈমান থাকা জরুরি; ঈমান দুর্বল হলে রোজা মাকরুহ হয়।
২৮. খারাপ কাজে জড়ানো
রোজার দিনেও যদি কেউ খারাপ কাজে লিপ্ত হন, তবে তার রোজা মাকরুহ হয়।
২৯. অমুসলিমের মতো কাজ করা
অমুসলিমদের রোজা সংক্রান্ত রীতি অনুসরণ মাকরুহ।
উপসংহার

রোজার সময় এসব কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত। ইসলাম আমাদের রোজার গুরুত্ব বুঝিয়ে সঠিকভাবে পালন করতে বলেছে। রোজার সময় সতর্ক থাকলে এটি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।