মসজিদুল হারামে কি তুষারপাত হয়েছিল: মসজিদুল হারাম বা কাবা শরীফ মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। এটি সৌদি আরবের মক্কা শহরে অবস্থিত এবং সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য হজ ও উমরাহর জন্য কেন্দ্রীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে তৈরি এই মসজিদে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মুসলিম প্রার্থনা করেন এবং শান্তি খুঁজে পান। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, মসজিদুল হারামে কখনও তুষারপাত হয়েছে কিনা? সৌদি আরবের আবহাওয়া সাধারণত গরম ও শুষ্ক হওয়ায় সেখানে তুষারপাত একেবারেই অস্বাভাবিক। তবে সাম্প্রতিক কিছু তথ্য ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে অল্প কিছু সময়ের জন্য তুষারপাত ঘটেছে।
সৌদি আরবের আবহাওয়া: তুষারপাতের সম্ভাবনা
সৌদি আরবের জলবায়ু সাধারণত উষ্ণ মরুপ্রধান। গ্রীষ্মকালীন সময়ে তাপমাত্রা অনেক উচ্চ থাকে, যা ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। শীতকালে তাপমাত্রা কিছুটা কমে এলেও দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে তাপমাত্রা খুব বেশি নিচে নামে না। তবে, সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলে যেমন তাবুক বা আল-উলা এলাকায় শীতকালে হালকা তুষারপাত দেখা যায়। এ এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা শীতকালে ০ ডিগ্রির নিচে নামতে পারে, ফলে তুষারপাতের সম্ভাবনা থাকে।
মসজিদুল হারামের আবহাওয়া
মক্কা শহর যেখানে মসজিদুল হারাম অবস্থিত, তা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৭৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে সাধারণত বছরের অধিকাংশ সময় উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। শীতকালে তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেলেও তা কখনোই তুষারপাতের পর্যায়ে যায় না। ৫০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মক্কা বা মসজিদুল হারামে তুষারপাতের কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি।
তুষারপাতের মিথ এবং গুজব
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝে মাঝে মসজিদুল হারামে তুষারপাতের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যায়। তবে, এসব ছবি বা ভিডিও সাধারণত মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রচারিত হয়। বেশিরভাগ সময়ই এগুলো ফটোশপ করা বা অন্য কোনো স্থানের তুষারপাতের ছবি ব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়।
যেমন ২০২০ সালে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যেখানে মসজিদুল হারামের আঙ্গিনায় তুষারপাতের দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। পরে প্রমাণিত হয় যে ভিডিওটি ফটোশপ করা এবং আসল ভিডিও নয়। তাই এসব গুজবে কান না দিয়ে প্রকৃত তথ্য জেনে রাখা উচিত।
সৌদি আরবের কিছু অঞ্চলে তুষারপাতের প্রকৃত ঘটনা
যদিও মক্কা বা মসজিদুল হারামে তুষারপাতের কোনো ঘটনা নেই, তবুও সৌদি আরবের কয়েকটি অঞ্চলে শীতকালে তুষারপাত ঘটে। উদাহরণস্বরূপ:
- তাবুক: তাবুক শহরটি উত্তর সৌদি আরবে অবস্থিত এবং এখানে শীতকালে তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। প্রায় প্রতি বছরই তাবুকে তুষারপাত হয়, যা সৌদি আরবের অন্যান্য অংশ থেকে একেবারেই ভিন্ন।
- আল-উলা: আল-উলা সৌদি আরবের আরেকটি শীতল স্থান যেখানে মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়।
- আসির এবং আল-বাহা: এ এলাকাগুলো পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে মাঝে মাঝে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে এবং হালকা তুষারপাতও ঘটে।
মসজিদুল হারামে কি তুষারপাত হয়েছিল : একটি কল্পনা না বাস্তবতা?
মসজিদুল হারাম এবং মক্কা অঞ্চলে তুষারপাতের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। এটি একটি গরম মরুপ্রধান এলাকা এবং এখানকার তাপমাত্রা এমন অবস্থায় কখনোই যায় না যেখানে তুষার জমতে পারে। তাই মসজিদুল হারামে তুষারপাতের কথা বলা বা তা কল্পনা করা শুধু মিথ বা কল্পনা হিসেবেই থেকে যাবে।
শেষ কথা
মসজিদুল হারাম তুষারপাতের জন্য কোনও উপযুক্ত স্থান নয় এবং আবহাওয়া সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। ইসলামের পবিত্র স্থান হওয়ায় এটি নিয়ে অনেক গল্প এবং মিথ তৈরি হয়েছে, তবে বাস্তবতায় এখানে তুষারপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। মসজিদুল হারাম এমন একটি পবিত্র স্থান যেখানে লাখ লাখ মুসলিম শান্তি এবং সমৃদ্ধি লাভের আশায় আসে। আবহাওয়ার পরিবর্তন কোনোভাবেই এ পবিত্র স্থানকে প্রভাবিত করতে পারে না। আশা করি এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পেরেচেন মসজিদুল হারামে কি তুষারপাত হয়েছিল
আরও পড়তে পারেন: